সোমবার , ১৪ এপ্রিল ২০২৫
Monday , 14 April 2025
৩০ চৈত্র ১৪৩১
১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আজ চৈত্র সংক্রান্তি

আজ চৈত্র সংক্রান্তি
ছবি: সংগৃহীত

চৈত্রের শেষ দিন আজ, তাই সে বিদায় নেবে। কাল আসবে বৈশাখ। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি। এদিন বাংলা বর্ষেরও শেষ দিন। পরের দিন নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২। একইসঙ্গে এদিন থেকে শুরু পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বিজু উৎসব। দুই দিনব্যাপী পালিত হয় এই উৎসব। এবার এই উৎসব উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

চৈত্র থেকে বর্ষার প্রারম্ভ পর্যন্ত সূর্যের যখন প্রচণ্ড উত্তাপ থাকে তখন সূর্যের তেজ প্রশমন ও বৃষ্টি লাভের আশায় কৃষিজীবী সমাজ বহু অতীতে চৈত্র সংক্রান্তির উদ্ভাবন করেছিল। আবহমান বাংলার চিরায়ত নানা ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি। বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে নানা অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন। কথিত আছে চৈত্র সংক্রান্তিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন। তাই চৈত্র সংক্রান্তি হচ্ছে বাঙালির আরেক বড় উৎসব।

চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উদযাপনে থাকছে নানা আয়োজন। দুটি উৎসব ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এ কর্মসূচি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হবে। জানা গেছে, চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ উপলক্ষে শনিবার (১২ এপ্রিল) দেশব্যাপী ১২টি অঞ্চলে সাধুমেলার আয়োজন করা হয়। একই দিন শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের অংশগ্রহণে পালিত হয় ফাগুয়া উৎসব।


আজ ও আগামীকাল (১৩ ও ১৪ এপ্রিল) নবপ্রাণ আন্দোলনের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। আজ বিকাল ৩টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে ব্যান্ড শো। পারফর্ম করবে এফ মাইনর (গারো ব্যান্ড), ইনভোকেশন (চাকমা ব্যান্ড), ইমাং (ত্রিপুরা ব্যান্ড), চিম্বুক (মারমা ব্যান্ড), ইউনিটি (খাসিয়া ব্যান্ড) এবং ওয়ারফেজ, দলছুট, এভোয়েড রাফা, লালন, ভাইকিংস, স্টন ফ্রি-সহ আরও অনেকে।

পহেলা বৈশাখের দিন (১৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছায়ানটের আয়োজনে ঢাকার রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। একইদিন সকাল ৬টায় ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার আয়োজনে হবে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

এদিন সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বাঙালিসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সন্ধ্যায় চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ড্রোন শো ও বিকালে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। 

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, এ বছর পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ান অংশগ্রহণ করবে। ব্যান্ড মিউজিশিয়ানরা ‍পৃথিবীর শান্তি কামনায়- বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য সম্মিলিতভাবে একটি গান গাইবে। এই শোভাযাত্রায় ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের সব মিউজিশিয়ানকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে পূর্বে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি, সেটা এবার করা হয়েছে। কারণ উৎসবটা বাংলাদেশের, তাই সবার অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে।

বিজু বা বৈসাবি উৎসব পালন করে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীরা। চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসবের আমেজ এখনও দেখা যায়। বৈসাবি নামের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ত্রিপুরার বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। উৎসব তিনটির অদ্যাক্ষর মিলে হয়েছে ‘বৈসাবি’।

তবে বিজু বা বৈসাবি পালিত হয় দুই দিন ধরে। চৈত্র সংক্রান্তি এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে এই উৎসব। এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন হয় ফুল বিজু উৎসব। এদিন চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা ফুল সংগ্রহ করতে পাহাড়ে যায়। তাদের সংগ্রহ করা ফুলকে তিন ভাগ করা হয়। এক ভাগ দিয়ে বুদ্ধদেবকে পূজা করা, এক ভাগ জলে ভাসিয়ে দেওয়া এবং বাকি এক ভাগ দিয়ে ঘর সাজানো হয়।

চৈত্র সংক্রান্তির দিনে পালিত হয় মূল বিজু। এদিন সকালে বুদ্ধদেবের মূর্তিকে স্নান করানো হয়। ছেলে-মেয়েরা নদী বা কাছের জলাশয় থেকে জল বয়ে নিয়ে এসে বৃদ্ধ দাদু-দিদিমাকে স্নান করিয়ে আশীর্বাদ নেয়।

এছাড়া চৈত্র মাসের শেষ দিনে পাজন নামে অভিনব রান্নার আয়োজন করা হয় চাকমা সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে। পাজন হলো নানা সবজির মিশ্রণে তৈরি একটি তরকারি। এদিন বাড়িতে যেসব বন্ধু বা অতিথি আসে তাদের এই পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করেন চাকমারা। তাদের ধারণা, বছর শেষের দিনে সব ধরনের সবজি দিয়ে তরকারি খেলে মঙ্গল হয়। এতে নতুন বছরে শুভ সূচনা হয়। তাছাড়া পুরান ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয়ে আসছে ঘুড়ি উৎসব। এদিন আকাশ ছেয়ে যায় রঙ-বেরঙের নানান আকারের ঘুড়িতে।

এবার দেশের সব মাদ্রাসায় দুই দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। বুধবার (৯ এপ্রিল) এক অফিস আদেশে, চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ এবং আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উপলক্ষে সব মাদ্রাসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও সাড়ম্বরে এ উৎসব পালন করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়