শুক্রবার , ১১ এপ্রিল ২০২৫
Friday , 11 April 2025
২৭ চৈত্র ১৪৩১
১১ শাওয়াল ১৪৪৬

ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০২:১৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ডুবেছে

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ডুবেছে
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ডুবেছে

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট ডুবেছে, চর-তীরবর্তীরা নিরাপদে ফিরছেন

ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে চর ও নদীর পাশর্^বর্তী এলাকার মানুষ নিরাপ স্থানে ফিরছেন । হঠাৎ উজানের পানিতে বন্যার পানি আতঙ্কে স্থানীয়রা। চর এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি। ভেসে যাচ্ছে ফসলি জমি। নতুন করে বন্যার আশংঙ্কা করছে তীরবর্তী বাসিন্দারা।  

রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নের (চর খিদিপুর) মধ্যচরে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। খিদিরপুর চরে বন্যার পানি প্রবেশের কারনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে গবাদিপশুসহ প্রয়োজনিয় আসবাপত্র নিয়ে নিরাপদে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। একইভাবে গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার ঘাটে নৌকায় কয়েকটি পরিবার নিয়ে এসেছে। নৌকাগুলোর কোনোটিতে গরু-ছাগল, কোনোটিতে বস্তায় বস্তায় ধান আবার কোনোটিতে চর থেকে ভেঙে নিয়ে আসা বাড়ির চাল, টিনের ছাউনি ও আসবাবপত্র। ভুক্তভোগীরা বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে তাদের এলাকায় কয়েকটা রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে এবং ডুবে গেছে ফসলি জমি। চর বয়ারমারি গ্রামের প্রায় ৫০টি বাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে।

অপরদিকে জেলা নগরের ওপারে চর মাজারদিয়াড় এলাকায় কিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেলেও এখন সেখানে ভাঙন নেই। তবে পাড় ভাঙছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক নারায়ণপুর ইউনিয়নে। ফতেপুর পলাশি রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনের কারণে ওই ইউনিয়নের আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের প্রায় ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

রাজশাহীর চর বয়ারমারির পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জেলেপাড়া গ্রামেও তীব্র নদীভাঙন চলছে। পোলাডাঙ্গা এলাকায় একটি সেতু ছিল। এই সেতুও ভেঙে গেছে নদীভাঙনের কারণে।ভাঙন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা এবং নারায়ণপুর এলাকায়ও। চাঁপাইনবাবগঞ্জেই পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে প্রায় ছয় হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে নাটোরের লালপুর উপজেলার কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরের বাসিন্দাদের অনেকেই এখন ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ সবকিছু নৌকায় তুলে চলে আসছে এই পারে। খুঁজছে বসবাসের নতুন ঠিকানা। শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়নে প্রায় ২৫০, দুর্লভপুর ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫০০ ও মনাকষা ইউনিয়নে প্রায় ৩৫০টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে যে প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। এটা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত তালিকা করার জন্য সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলা হয়েছে। তালিকাটা চূড়ান্ত হলেই আমরা পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করব।’

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দপ্তরের হিসাবে, নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রাজশাহীর ৯ হাজার ৬৮১ বিঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ হাজার ৮৫৭ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। লালপুরের বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বেড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বেড়েছে। কিন্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে পানি কমেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন পানি কমতে পারে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়